"নওগাঁ ব্লাড সার্কেল" একটি স্বেচ্ছাসেবী সেবামূলক সংগঠন। কাজ করছে তারুণ্যের ইতিবাচক বিকাশে। স্বপ্ন দেখে সুন্দরতর সমাজ বিনির্মাণের। বিস্তারিত জানুন...

নওগাঁয় থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দোয়া মাহফিল

থ্যালাসেমিয়া নওগাঁ

শনিবার (৩০ মার্চ ২০২৪) বিকাল পাঁচটায় নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় সংলগ্ন মরাকাটা মাদ্রাসায় সামাজিক সংগঠন নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উদ্যোগে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দোয়া মাহফিল ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাথে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সুস্থতা কামনা করে দুই শত পথচারী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ইফতার করানো হয়।

ইফতার বিতরণ

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাহিদ হাসান বলেন, "থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। ১৯৯৪ সালে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ঘোষণা করা হলেও শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য রোগটি বাংলাদেশে অপরিচিত এবং অবহেলিতই রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে নন-প্রফিট চ্যারিটেবল সংস্থা, বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ) ও বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দেশে এ রোগের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য জার্নাল আরফানেট জার্নাল অব রেয়ার ডিজিজেসে প্রথম একটি কম্প্রিহেনসিভ আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১০-১২ শতাংশ মানুষ এ রোগের বাহক। অর্থাৎ প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক এবং কমপক্ষে প্রায় ৬০-৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। এখনো অনেক মানুষ আছে যারা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বেশিরভাগই এ রোগের নাম শোনেনি। দুজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের সন্তানের রোগটি দেখা দিতে পারে। তাই নিজে বাহক কিনা, তা জানতে হিমোগ্লাবিন ইলেকট্রোফরেসিস টেস্ট করে নিতে হবে। থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সর্বোত্তম। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে, দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নবম ও দশম শ্রেণির সব বিভাগের পাঠ্যসূচিতে থ্যালাসেমিয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যথাযথ সচেতনতা ছাড়া থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ কর্মসূচি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।"

অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মুয়ীদ


সদস্যদের বক্তব্যের মাঝে নওগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রিজভী আহম্মেদ রিজোয়ান বলেন, "শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা জরুরী। বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়ার বাহক টেস্টের মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা অন্যের দেওয়া রক্তের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। কিন্তু, প্রয়োজনের তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে আহবান করি, তারা যেন রক্তদানে সংকোচবোধ না করেন। আপনার রক্তেই বেঁচে থাকবে তারা। হয় আপনি রক্তদান করবেন, না হয় তারা মৃত্যুবরণ করবে। বেঁচে থাকলেও ছটফট করবে যন্ত্রণায়। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, রক্তদান করবেন নাকি অজুহাত পেশ করবেন?"

ইফতার বিতরণ

নওগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, "নওগাঁ ব্লাড সার্কেল তার সীমিত সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সেবা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই রমজানে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি, সচেতনতার মাধ্যমে দেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া শতভাগ প্রতিরোধ হোক। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সেবায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।"

গার্লস স্কুলের সামনে

সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজ রক্সি জানান, "নওগাঁ ব্লাড সার্কেল একটি সেবামূলক সামাজিক সংগঠন। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত আমরা রোগীদের পাঁচ হাজার ব্যাগের অধিক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি। ২২ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে রক্তের দায়িত্ব গ্রহণ করার পাশাপাশি আক্রান্তদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও আমরা বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ, কুরআন শিক্ষার আসর, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন ও দেয়ালিকা প্রকাশের মাধ্যমে তরুণদের ইতিবাচক বিকাশে কাজ করে আসছি।"

নওগাঁ ইয়ুথ ক্লাব

ইফতারের পূর্বে গোস্তহাটির মোড়, কেডির মোড়, হাসপাতাল মোড়, ডিগ্রীর মোড় এবং মরাকাটা মাদ্রাসা সহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইফতার বিতরণ করা হয়। এরপর থ্যালাসেমিয়া রোগী, রক্তদাতা এবং দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।



1 تعليقات

  1. আলহামদুলিল্লাহ, সুন্দর একটি আয়োজন ছিলো।
    আমি ও এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলাম।

    ردحذف

إرسال تعليق

أحدث أقدم