- শায়খ আতিক উল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ)
আজকের দিনে (২ নভেম্বর) বাংলাদেশে একটি দিবস পালিত হয়। "স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস" অনেকে অনেক ধরনের ঘটনা বর্ণনা করে রক্তদানের জন্য উৎসাহিত করে থাকে। তেমনি একটি ঘটনা স্বেচ্ছায় রক্তদান সম্পর্কিত –
|| রক্তদান ||
ওলগার। ইউক্রেনের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল ক্রিমিয়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। অনেক দিন থেকেই এই অঞ্চলের প্রতি রাশিয়ার লোলুপ দৃষ্টি। কিছুদিন আগে আবার হামলা চালায় এই অঞ্চলে। হাজার হাজার তাতার মুসলিম উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
রাশা ও ইউক্রেন বাহিনীর সংঘর্ষের মুখে, নির/স্ত্র তাতাররা অসহায় শিকারে পরিণত হয়। রুশ বোম|রু বিমানগুলোর এক নাগাড়ে বো*মা বর্ষণের ফলে গ্রামকে গ্রাম শূন্য হয়ে গেছে।
ওলগার গ্রামে অনেকেই এসে আশ্রয় নিয়েছে। অসংখ্য গুরুতর আহত মুসলমান ছোট্ট একটা হাসপাতালে এসে ঠাঁই নিয়েছে। ডাক্তারের স্বল্পতার কারণে অনেক শিশু ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে। সাইবেরিয়ার কনকনে হাঁড় কাঁপানো হিমেল বাতাসে তুষার উড়ছে, পেঁজা তুলার মতো।
পাশের শহরে নাতালভে একটা মিশনারী হাসপাতাল আছে। সেখানে অনেক ডাক্তার-নার্স আছে। অনেকে কষ্ট করে সেখানে গিয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সবাই সেখানে পারতপক্ষে যেতে চায় না। সেখানে গেলে খ্রিস্টান ধর্মের অনেক কিছু মেনে চিকিৎসা নিতে হয়।
কিন্তু এই হাসপাতালে একটা শিশুর অবস্থা খুবই করুণ। এক নাগাড়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শিশুটির নাম তানিয়া প্রখোভা। মা-বাবা দু’জনেই মারা গেছে। তানিয়ার কষ্ট দেখে একজন একজন নার্স মিশনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করল। মিশনারি থেকে বলা হলো এখনি একজন ডাক্তার পাঠানো হবে।
কয়েক ঘণ্টা পরে একজন ডাক্তার এলেন। সাথে একজন নার্সও এলো। ডাক্তার তানিয়াকে পরীক্ষা করে দেখলেন। তাকে খুব বেশি আশাবাদি মনে হলো না। তিনি বললেন, অনেক রক্ত লাগবে। আশেপাশের অনেকের রক্ত পরীক্ষা করে দেখলেন। কারো সাথেই রক্তের গ্রুপ মিললো না।
একটা কিশোর এগিয়ে এল। তার নাম মাসুদ ওলিফ। সে বললো:
-আমি রক্ত দিতে চাই।
-তুমি চাইলেই তো হবে না। গ্রুপ মিলতে হবে।
ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন, মিলে গেলো। মাসুতকে পাশের বেডে শুইয়ে দেয়া হলো। ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ গাঁথার থেকেই সে ফোঁপাতে শুরু করে দিল। বিড়বিড় করছে। কিছুক্ষণ পরপরই সে কেঁদে উঠছিলো আর অস্পষ্টভাবে কী যেন বলছিলো।
ডাক্তার তাকে জিজ্ঞেস করলো:
-খোকা, তুমি কি ব্যথা পাচ্ছো?
এর উত্তরে মাসুদ কী বললো ডাক্তার তার ভাষা বুঝতে পারলো না। ডাক্তার এই হাসপাতালের একজন নার্সকে ডেকে জানতে চাইলেন:
- এই ছেলেটা কি ব্যথা পাচ্ছে?
নার্স মাসুদের কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো:
: তুমি কি ব্যাথা পাচ্ছো?
- না।
: তাহলে গোঙাচ্ছ কেন? কোনও সমস্যা অনুভব করছো?
- না। তবে আমার দাদুকে আর দেখতে পাবো না ভেবে খারাপ লাগছে?
: কেন?
- আমি তো এই মেয়েটাকে রক্ত দেয়ার পর মারা যাব, তাই দাদুর কথা ভেবে খারাপ লাগছে?
: রক্ত দিলে মারা যায়, এটা তোমাকে কে বলেছে?
- রক্ত দিলে কেউ মরে না? তাহলে তো ভালই হয়েছে। না হলে আমার দাদু বড় একা হয়ে যাবেন।
: তুমি মারা যাবে জেনেও রক্ত দিতে রাজি হলে কেন?
- বাড়িতে আমার বৃদ্ধা দাদু আছেন। আব্বু-আম্মু নেই। তিনিই আমাকে বড় করেছেন। গতকালের বোমা হামলায় তিনি খুবই আহত হয়েছেন। বুড়ো মানুষ হাঁটতে পারেন না, তাই আসতে পারেন নি। আমাকে পাঠিয়েছেন ওষুধ নিয়ে যেতে। আর আসার সময় বলে দিয়েছেন, জীবন দিয়ে হলেও যেন আহতদের সেবা করি।
আমি ফিরে না গেলে দাদু, না খেয়েই মারা যাবেন। আমাদের গ্রামে এখন কেউ নেই। সবাই চলে গেছে। আমি ভাবছিলাম আমার দাদুকে আর দেখবো না। তাই দাদুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিলাম।
"রক্তদান" লেখাটি জনপ্রিয় লেখক উস্তায আতিক উল্লাহ হাফিযাহুল্লাহর টাইমলাইন থেকে নেওয়া। যদিও লেখাটিতে আপাদমস্তক একটি বালকের হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে কিন্তু পরোক্ষভাবে তিনি তাতার মুসলিমদের অসহায়ত্ব তুলে ধরেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন